এএসপিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১০ জন গ্রেপ্তার, প্রত্যেকে রিমান্ডে

রাজধানীর মাইন্ড এইড হাসপাতালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমকে হত্যার ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেফতার ১০ আসামির প্রত্যেকের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে এএসপি আনিসুল হত্যায় তাদের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। দুপুরে রিমান্ডের আবেদন করে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত এই আদেশ দেন।

তেজগাঁও জোনের উপ পুলিশ কমিশনার হারুনুর রশিদ বলেন, সিসিটিভিতে যে ১০ জনকে দেখা যাচ্ছে, তাদের প্রত্যেককেই আমরা গ্রেপ্তার করেছি। মাইন্ড এইড হাসপাতালটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো কাগজপত্র নেই। মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সনদও দেখাতে পারেনি তারা। মানসিক হাসপাতাল চালাতে হলে যে ধরনের লাইসেন্স থাকতে হয়, তার কিছুই তারা দেখাতে পারেনি। এ ছাড়া মানসিক হাসপাতাল থেকে তাৎক্ষণিক রোগীকে সেখানে নেওয়া হলো, এর পেছনে কোনো দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছি আমরা।

জানা গেছে, আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসের পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ওই বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারের মেধাতালিকায় দ্বিতীয় ছিলেন। প্রথমজন ফাউন্ডেশন কোর্স না করায় তাঁকেই ব্যাচের প্রথম হিসেবে ধরা হতো। তবে পুলিশের এই কর্মকর্তা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ জন্য তাঁকে মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

পুলিশের উদ্ধার করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানো হয়। তাঁকে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। কেউ কেউ তাঁর পা চেপে ধরেন। এ সময় মাথার দিকে থাকা দুজন কর্মচারী হাতের কনুই দিয়ে তাঁকে আঘাত করছিলেন।

ভিডিওতে আরো দেখা যায়, চার মিনিট পর আনিসুলকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই তাঁর শরীর নিস্তেজ ছিল। একজন কর্মচারী তখন তাঁর মুখে পানি ছিটান। কিন্তু তাতে আনিসুল করিমের সাড়া মেলেনি। এর সাত মিনিট পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী কক্ষে প্রবেশ করেন। ১১ মিনিটের মাথায় কক্ষের দরজা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ১৩ মিনিটের মাথায় তাঁর বুকে পাম্প করেন সাদা অ্যাপ্রোন পরা নারী।

বরিশালের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনিসুল করিমের দাফন হয়েছে গাজীপুর সিটি কেন্দ্রীয় গোরস্থানে। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে জানাজার নামাজ শেষে দাফন করা হয় তাকে। এর আগে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বজনরা ফুলেল শ্রদ্ধা জানান তাকে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আজাদ মিয়া, কাপাসিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খানসহ পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা ও সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন আনিসুল করিম। ৩১তম বিসিএস ক্যাডারে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। স্ত্রীসহ ৩ বছর বয়সের এক ছেলেসন্তানের জনক ছিলেন তিনি।

About স্টাফ রিপোর্টার

Check Also

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত

দুর্নীতির দায়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *