জীবিকার তাগিদে অনেকে পেশা বদল করছেন

করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে যে লকডাউন পরিস্থিতি চলছে, তাতে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। লকডাউনের মেয়াদ বাড়ায় এসব মানুষের বেঁচে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। তাই তো জীবিকার তাগিদে অনেকে পেশা বদল করছেন। বেছে নিয়েছেন নতুন পেশা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অল্প বেতনের চাকরিজীবী, গপরিবহনের চালক, হেলপার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, অনেকেই কোনো উপায় না পেয়ে পরিবার নিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে এখন তারা সবাই এখন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে অনেকে পুরোদমে মৌসুমী ফল বিক্রেতা, সবজি বিক্রেতা, কেউ মাছ বিক্রেতা, কেউ বাচ্চাদের খেলনা বিক্রেতা, ঈদ উপলক্ষে অনেকেই নতুন কাপড়-চোপড় বিক্রেতাও হয়েছেন। রাস্তায় রাস্তায় ভ্যানগাড়ি ঠেলে, কেউ ভ্যানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব পণ্য বিক্রি করছেন। আবার অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন রাজধানীতে রিকশা চালাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাস্তায় ও বিভিন্ন অলিগলিতে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীর সংখ্যা ব্যাপক হাড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী বলেন, প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বসে থাকতে থাকতে জমানো টাকাগুলো শেষ করেছি, পরে কোনো উপায় না দেখে রমজানের শুরু থেকেই একটি ভ্যানগাড়ি ভাড়া করে সবজি বিক্রি ব্যবসায় নেমেছি। দুটি সন্তানসহ ৪ জনের সংসার। গ্রামের বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন। সারাদিন সবজি বিক্রি করার পরে ভ্যান ভাড়া, দেওয়ার পরে ৩০০ থেকে ৪০০টাকা থাকে।

ভ্যানে বিভিন্ন মৌসুমী ফল সাজিয়ে বিক্রি করছেন বেসরকারি এক চাকরিজীবী। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি প্রফেশনাল ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী না। জানতে চাইলে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অর্নাস, মাস্টার্স শেষ করে গত দুই বছর আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। দেশে যখন লকডাউন শুরু হয় তখন থেকেই তার অফিস বন্ধ। অফিস বন্ধ থাকায় বেতনও বন্ধ। চাকরিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরে মাসখানেক স্বজনদের কাছ থেকে ধারকর্জ করে চলেছি। মা-বাবা ছোট ভাই ও বোনসহ ৫ জনের সংসার। সংসারের খরচ জোগাতেই এখন বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে রাস্তায় রাস্তায় ফল বিক্রি করছি।

টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে কোচিং বন্ধ ইয়াসিরের। প্রতিদিন যেখানে ক্লাস নিলেও মিলত ৩০০-৫০০ টাকা। এই করোনা দুর্যোগে উপার্জনের সেই বন্ধ হয়ে আছে। উপার্জনক্ষম ইয়াসিরের আয়ের একমাত্র উৎস কোচিং ও প্রাইভেট বন্ধ থাকায় বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। সাত বছর আগে বাংলায় মাস্টার্স সম্পন্ন করা শত শত শিক্ষার্থীর প্রিয় শিক্ষক ইয়াসির এখন অটোরিকশা চালক।

করোনায় কাজ হারিয়ে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী হওয়া মানুষের সংখ্যা এখন অনেক। তার পরিচিতদের মধ্যে অনেকে রাজধানীর বিভিন্ন রোডে রেস্টুরেন্টের হয়ে ইফতারি বিক্রি করছেন। অনেকে ফল বিক্রি করছেন। আবার কয়েকজন রিকশাও চালাচ্ছেন।

দীর্ঘ লকডাউনের কারণে তাদের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই তারা অন্য কোনো উপায় না দেখে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা শুরু করেছে। এখন শহরে প্রত্যেক দিনই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে। বাঁচার জন্য মানুষ বিকল্প জীবিকার পথ খুঁজবেন এটাই স্বাভাবিক, এটা বাস্তবতা।

About স্টাফ রিপোর্টার

Check Also

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত

দুর্নীতির দায়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *