বলিউড অভিনেত্রী রেখার শুভ জন্মদিন ৷ রেখাকে বলিউডের চিরসবুজ যৌন আবেদনময়ী অভিনেত্রী হিসেবে মনে করা হয়।৬৬ বছরে পা রাখলেন এই কিংবদন্তি ৷ ৪০ বছরের অভিনয় জীবনে রেখা ১৮০টির অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। রেখা তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেন, দুইবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ও একবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে। ১৯৮১ সালে উমরাহ জান চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
তবে রেখার এই বলিউডের যাত্রা অত্যন্ত সহজ ছিলনা ৷ ১৯৬৬ সালে তেলুগু ছবি সঙ্গুলা রত্নমে শিশু অভিনেত্রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ৷ নায়িকা হিসাবে তাঁর প্রথম ছবি শ্রাবণ ভাদো ১৯৭০-এ মুক্তি পেয়েছেন ৷ কেরিয়ার শুরু প্রথম কিছু বছর পর্যন্ত ৷ তাঁর লুক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ৷ ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে বলিউডে মোহময়ী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন রেখা ৷
একটি সাক্ষাৎকারে রেখা জানিয়েছিলেন তাঁর গায়ের রং ও দক্ষিণ ভারতের বিশেষত্বের কারণে দেখতে খারাপ এক শিশু বলে মনে করা হত ৷ সত্যতা এটাই যে নিজের বিষয়ে মানুষের ধারণা বদলাতে তিনি দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিলেন ৷ পরবর্তী ছবি বাছতে শুরু করেন অর্থাৎ কোন ছবিতে অভিনয় করবেন সেটা বাছ বিচার করতে থাকেন ৷ ১৯৭৬ সালে দো আনজানে তাঁর প্রথম পারফরমেন্স ওরিয়েন্টেড ছবি ছিল ৷ ভক্তরা এই অবতারে তাঁকে পছন্দ করেন ৷
রেখা তেলুগু অভিনেত্রী পুষ্পাবল্লি ও তামিল অভিনেতা গণেশনের মেয়ে ছিলেন ৷ রেখার বাবা মায়ের বিয়ে হয়নি তাঁর বাবা শৈশবেই রেখাকে নিজের সন্তান হিসাবে মানতেন না ৷ তিনি অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন কখনই দেখেননি ৷ কিন্তু পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে স্কুল ছেড়ে ছায়াছবিতে কাজ করতে বাধ্য হন তিনি ৷
১৯৭৮ সালে মক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ঘর’ এক অত্যাচারিতা নারীর ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন যেখানে এক ধর্ষিতার জীবনের কান্না লুকিয়ে ছিল, কঠোর জীবন সংগ্রামের ছবিও ফুটে উঠেছিল৷ যা তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম সুপারহিট ছবি ছিল ৷ বিনোদ মেহেরার সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিয়ে অভিনয় করেছিলেন ৷ তাঁর স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বিনোদ মেহেরা ৷ স্বামীর সেবা ও ভালবাসায় আস্তে আস্তে জীবনের গতিপথে ফিরে আসেন ৷ মূল কাহিনির উপজীব্য বিষয় ছিল এটাই ৷ ঘর ছবিতে অভিনয় করে সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনয়ের জন্য প্রথম ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন ৷
রেখা ও অমিতাভ বচ্চন বেশ কয়েকটি ছবি একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন ৷ দু’জনের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি প্রতিদিনই খবরের কাগজের গসিপে পরিণত হয়েছে ৷ সেই কাহিনি নিয়মিত প্রকাশিত হত কাগজে-পত্রিকায় ৷ বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে রেখার যোগাযোগ আছে এই নিয়ে প্রচুর আলাপ আলোচনা হত ৷
ফের একবার রেখা ১৯৭৮ সালে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে মুকাদ্দর কা সিকান্দর ছবিতে অভিনয় করেছেন ৷ এই ছবিই সেই দশকের সব থেকে বড় হিট ছবি ছিল ৷ এরপরেই অভিনেত্রীদের তালিকায় পয়লা নম্বর স্থানটি দখল করেন রেখা ৷
রেখা ও অমিতাভের সম্পর্ক ১৯৮১ সালের শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ শেষ ছবি যশ চোপড়ার সঙ্গে সিলসিলা ৷ অমিতাভ. রেখা ছাড়াও এই ছবিতে জয়া বচ্চনও অভিনয় করেছিলেন ৷
১৯৯০ সালে রেখা ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওয়ালকে বিয়ে করেন ৷ বিয়ের এক বছর পরে মুকেশ আগরওয়াল আত্মহত্যা করেছিলেন ৷ সেই সময়ে তিনি আমেরিকায় ছিলেন ৷ রেখার ঘনিষ্ঠ মানুষেরা সেই সময়কে রেখার জীবনের অত্যন্ত কঠিন সময় বলেই মনে করেছেন ৷
বিধবা হয়েছেন অনেক আগে। নতুন করে বিয়ে করেছেন, এমন ঘটনাও জানা যায়নি। কিন্তু এর পরও তাঁর সিঁথিতে সিঁদুর। তবে কি রেখার পুরোনো বান্ধবী দীপালির বক্তব্য ধরেই বলতে হয়, ‘রেখা আজো অমিতাভের জন্যই সিঁদুর পরেন?’ যদিও দীপালির প্রকাশ্যে বলা ওই বক্তব্যে কখনোই প্রতিবাদ করেননি রেখা। আজো কেউ জানে না, রেখা-অমিতাভের অমলিন এই প্রেমের সম্পর্কের গভীরতা ঠিক কতটা।
তবে অমিতাভের সঙ্গে পুরোনো প্রেমের স্মৃতিকে কখনোই প্রকাশ্যে আনেননি রেখা। গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কথা বলা দূরের কথা, এ পর্যন্ত একসঙ্গে কোনো পার্টিতেও দেখা যায়নি দুজনকে। বর্তমানে রেখা মুম্বাই এর বান্দ্রায় তার নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন।