বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে তাকে রাজধানীর স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আকরাম খানের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (১০ এপ্রিল) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও ভালোই ছিলেন তিনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কাশিটা বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বেশ কিছু টেস্ট করানোর পর সাবেক এ অধিনায়ককে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। স্পেশালাইজড হাসপাতালে ডা. মহিউদ্দিনের তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি। তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন আকরাম খানের সহধর্মিণী সাবিনা আকরাম। আকরাম খান করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তার বাসার সবার করোনা টেস্ট করানো হয়। সেই টেস্টে বাকি সবাই নেগেটিভ হন।
আকরাম খানের আগে করোনায় আক্রান্ত হন মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রধান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। নিজ দেশ শ্রীলঙ্কায় যেতে করোনা টেস্ট করে পজিটিভ হয়েছেন তিনি। সিলভার পর এবার করোনায় আক্রান্ত বিসিবি পরিচালক।
আকরাম খান ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ৮টি টেস্ট ও ৪৪টি একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ১৫টি সীমিত ওভারের একদিনের খেলায় বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন। মারকুটে ব্যাটসম্যান আকরাম খান প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগ দলের হয়ে খেলেন।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উদ্বোধনী টেস্ট ম্যাচে আকরাম খান দলে ছিলেন। উদ্বোধনী টেস্ট থেকে শুরু করে তিনি বাংলাদেশের হয়ে ৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। তার ব্যাটিং গড় ১৬.১৮ এবং সর্বোচ্চ রান ৪৪ যা ২০০১ সালে হারারেতে হয়েছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
১৯৮৮ সালের অক্টোবর মাসে আকরাম খানের একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক ঘটে তার শহর চট্টগ্রামেই। তিনি সেদিন ৮ নম্বর অবস্থানে খেলতে নামেন এবং দুর্দান্ত পাকিস্তানি বোলারদের মোকাবিলা করে ৩৫ বলে ২১ রান করেন।
১৯৯৫ সালে শারজায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে তিনি বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন। তার প্রথম অর্ধশতরান আসে কলম্বোয় ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিনি এবং আতহার আলী খান ১১০ রানের জুটি গড়েন। তার সর্বোচ্চ একদিনের আন্তর্জাতিক রান ৬৫ আসে ১৯৯৯ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ঢাকায়।
তিনি ১৯৯৯ এবং ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। ৪২ রান করে ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে স্মরণীয় জয়ে তিনি বড় অবদান রাখেন।
১৯৯৪ থেকে ৯৫ মৌসুমে অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে আকরাম খান বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন। যখন দল সবেমাত্র আইসিসি ট্রফি ১৯৯৪ থেকে হতাশাব্যঞ্জক ফলাফল করে ফেরে এবং দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে তখন ঐক্যের অভাব ও অসন্তোষ ছিল। যদিও অধিনায়ক হিসেবে তার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, তবু এ ঝুঁকি নেন তিনি।
১৯৯৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চার দেশীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তার দল ফাইনাল খেলে এবং তিনি সেই ম্যাচে সাহসিকতাপূর্ণ ব্যাটিং করে ৬৬ রান করেন। যদিও ৫২ রানে বাংলাদেশ দল ভারত এ দলের কাছে পরাজিত হয়।
তার অধিনাকয়ত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জয়টি আসে ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়া। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ১৯৯৮ সালে আকরাম খানের হাত ধরেই কেনিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ তার প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয় পায়।